আসসালামু আলাইকুম, কোরবানির নাম দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে আপনারা অনেকেই গুগলের মাধ্যমে নিজেদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরা আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ পোষ্টের মাধ্যমে কোরবানির নাম দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনাদেরকে বিস্তারিত সকল তথ্যগুলো জানানোর চেষ্টা করব।
মূলত আমরা সকলেই জানি কোরবানির ঈদে যে পশু মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে জবাই করা হয়। এই পশুর মাংস কিভাবে বন্টন করবেন কিংবা আপনারা কোরবানির নাম দেওয়ার নিয়ম কিভাবে বিবেচনা করবেন সেই সম্পর্কেই আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে জানাবো।
মূলত প্রতিবছরই বাংলাদেশে সকল জায়গায় যার সামর্থ্য রয়েছে তারা পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। কোরবানির নাম দেওয়ার নিয়ম এবং সঠিকভাবে কোরবানির পশুর মাংস বন্টনের নিয়ম সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। এতে করে আমাদের বিভিন্ন সময়ে নানান ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়।
তাই অবশ্যই আজকের এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল। তাহলেই আপনারা কোরবানির নাম দেওয়ার নিয়ম এবং কোরবানির গোশত কিভাবে বন্টন করতে হয় সেই সম্পর্কে সকল তথ্যগুলো জানতে পারবেন।
কোরবানি কার উপর ফরজ | ঈদুল আযহা ২০২৩
মূলত একটি বিষয় আমাদের সকলের জানা উচিত কোরবানির নাম দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানার পূর্বে।
এবং সেই বিষয়টি হচ্ছে, কোরবানি কার উপর ফরজ।
কেননা কোরবানি কার উপর ফরজ এই বিষয়টি সঠিকভাবে না জানলে আমরা অনেকেই সহীহ শুদ্ধ নিয়মে কোরবানি দিতে পারব না।
তাই অবশ্যই আমাদের সকলের জানা উচিত কোরবানি কার ওপর ফরজ।
একটি বিষয় স্পষ্ট যে আমাদের দেশে কোরবানি দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন আলেমদের নানান ধরনের মতামত রয়েছে।
মূলত ও কোরবানি কার ওপর ফরজ সে বিষয়টি নিয়েই নানান ধরনের মতামত দিয়েছেন ওলামায়ে কেরামরা।
ধরুন কোন ব্যক্তির তেমন বিশেষ কোন আয় নেই,
তবে তার জমানো টাকা কিংবা ব্যাংকে রাখা আছে এমন টাকা রয়েছে। তার ওপর কি কুরবানী ফরজ হবে?
মূলত এই সকল প্রশ্নের উত্তরে বিভিন্ন ওলামায়ে কেরাম নানান ধরনের।
তবে বেশিরভাগ আলিমগণ বলেছেন কোরবানি দেওয়া হচ্ছে সুন্নত কিংবা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
তবে এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন হাতে গোনা কয়েকজন আলেম এবং তারা বলছেন কোরবানি দেওয়া হচ্ছে ওয়াজিব।
শরীয়তের হিসাব অনুযায়ী তাদের ওপর কোরবানি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যারা মুসলিম বিবেকসম্পন্ন এবং প্রাপ্তবয়স্ক।
তবে যে সকল আলেমগণ বলছেন পবিত্র কোরবানি দেওয়া হচ্ছে ওয়াজিব তাদের এ বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে। তারা বলছেন দুটি অত্যন্ত কঠিন শর্তের কথা।
প্রথমত যে ব্যক্তির মেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকবে সে ব্যক্তিকে অবশ্যই কোরবানি প্রদান করতে হবে।
এছাড়াও প্রথম শর্তে উল্লেখ রয়েছে, ওই ব্যক্তি কোরবানি দিবেন যে ব্যক্তি নেশা পরিমাণ সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ হয়েছে।
অপর একটি শর্ত হচ্ছে যে ব্যক্তি কোরবানি দিবেন সে ব্যক্তি অবশ্যই মুসাফির হওয়া যাবে না।
এই শর্তগুলো ঐ সকল আলেমগণের মত অনুযায়ী যে সকল আলেমগণ বলেছেন কোরবানি হচ্ছে ওয়াজিব।
কোরবানির গোশত বন্টনের নিয়ম – কোরবানির ঈদ ২০২৩
প্রতিটি মুসলমান মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে কোরবানির গোশত বন্টনের নিয়ম সম্পর্কে জানা।
কিভাবে কোরবানির গোশত বন্টন করতে হবে সে বিষয়ে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করতে বলেছেন।
এছাড়াও আমাদের প্রিয় নবী সঠিকভাবে কোরবানির গোশত বন্টন করতেন।
মূলত কুরবানীর গোশত বন্টনের ক্ষেত্রে অবশ্যই এই গোশতকে তিন ভাগে ভাগ করতেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
প্রথমত একবার গোশত গরিব মানুষের মাঝে বন্টন করে দিতেন।
এক ভাগ গোশত আত্মীয়-স্বজন দের মাঝে বন্টন করে দিতেন।
এবং বাদবাকি একভাগ নিজেদের জন্য রাখতেন। তবে এ বিষয়টিকে ইসলামে কোন জায়গাতেই শর্ত হিসেবে দেওয়া হয়নি।
একেবারে তিন ভাগে সমানভাবে ভাগ করতে হবে এমনটিও ইসলামে বলা হয়নি।
যদি ফকির কিংবা মিসকিন বেশি হয় সে ক্ষেত্রে গোশতের ভাগ বেশি হতে পারে।
আবার অন্যদিকে আত্মীয়-স্বজন যদি বেশি হয় তাহলে সেক্ষেত্রে গোস্তের ভাগ ভিন্ন হতে পারে।
আবার যদি পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই গোশতের ভাগ ভিন্ন হতে পারে।
কোরবানির গোশতের ভাগের জন্য কোন ধরনের শর্ত প্রযোজ্য করা হয়নি।
তবে কোরবানির গোস্ত যদি সঠিকভাবে তিন ভাগে ভাগ করা হয় তাহলে অবশ্যই সেটি আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ হবে।
এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে কোরবানির গোশত তিন ভাগ করা উত্তম।
অথবা কেউ যদি নিজেদের জন্য রেখে দেয় সে ক্ষেত্রেও কোরবানি হবে না এটি কোন ভাবেই বলা যায় না।
যদি কেউ এমন করে তাহলে কুরবানীর কোন ধরনের মর্যাদা থাকে না।
কেননা আমরা প্রতিবছর মহান আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে কোরবানি করে থাকি।
তাই অবশ্যই গরিব মিসকিন এবং আত্মীয়-স্বজনের মাঝে কোরবানির গোশত বন্টন করা উত্তম।
আশা করছি আপনারা ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরেছেন কোরবানির গোশত কিভাবে বন্টন করতে হয় এবং কিভাবে কোরবানির গোশত বন্টন করা উচিত।
চলুন এবার আমাদের এই পোষ্টের মূল বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যাক।
কোরবানির নাম দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনারা গুগলে যারা সার্চ করছিলেন তারা এই পোস্ট থেকে সম্পূর্ণ তথ্য গুলো ধারন করতে পারবেন।
পশু কোরবানির পূর্বে নাম দেওয়ার নিয়ম – কুরবানির ঈদ ২০২৩
অনেকে মনে করে থাকেন যে কোরবানির সময় পশু কোরবানি দেওয়ার পূর্বে কোরবানি দাতার নাম উল্লেখ করা সুন্নত। তবে এটি হচ্ছে সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।
পশু কোরবানি দেওয়ার সময় কিংবা পশু কোরবানি দেওয়ার পূর্বে যে কোরবানি দিচ্ছেন কিংবা কোরবানি দাতার নাম উল্লেখ করা সুন্নত নয়।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানির পশু জবাই করার সময় কার পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া হবে বা হচ্ছে তার নাম মুখে উল্লেখ করেননি।
শুধুমাত্র কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি বিসমিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার বলে পশু কোরবানি করেছেন।
মূলত আমরা মহান আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ কিংবা সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পবিত্র ঈদুল আযহার দিনে পশু কোরবানি দিয়ে থাকি।
এই পশু যে কুরবানী দেওয়ার সময় কারো নাম উল্লেখ করা তেমন জরুরী কোন বিষয় নয় এটি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ।
তবে কোরবানির আগে নিশ্চিত হওয়ার জন্য কোরবানি দাতার নাম গুলো পাঠ করা যেতে পারে।
এক্ষেত্রে এ বিষয়টি কোনভাবে সুন্নত কিংবা জরুরি কোন বিষয় নয়।
পশু জবাইয়ের সময় কোরবানিদাতাদের নাম উল্লেখ করাও সুন্নত নয়।
কেননা রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানির পশু জবাই করার সময় কার পক্ষ থেকে কোরবানি হচ্ছে তার নাম মুখে উল্লেখ করেননি।
তিনি কোরবানির পশু জবাই করার সময় মুখে বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বলেছেন।
এভাবে উল্লেখ করলেও হবে যে, আমরা অমুক বলছি, আমাদের কোরবানি কবুল করুন, অথবা সবার তরফ থেকে কোরবানি কবুল করুন। (সহীহ বুখারী-৫৫৫৮, সহীহ মুসলিম -১৯৬৬)
আরও পড়ুনঃ
কোরবানির ঈদ কত তারিখে 2023 | ঈদুল আযহা ২০২৩
মূলত প্রতিবছরই আমরা জিলহজ মাসের দশ তারিখ হতে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত মহান আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে পবিত্র ঈদুল আযহা পালন করে থাকে।
প্রতিবছরের মত এ বছরও ধারণা করা হচ্ছে আগামী ১০ শে জিলহজ্ব তারিখে পবিত্র কুরবানীর ঈদ পালিত হবে।
আর ইংরেজি মাস আগামী ২৮ শে মে জিলহজ মাসের ১০ তারিখ।
যেহেতু সকল ঈদ চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল হয়ে পালিত হয়ে থাকে সেহেতু অবশ্যই এক্ষেত্রেও চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল হয়েই ঈদুল আযহা পালন করা হবে।
মূলত বাংলাদেশ অন্যান্য আরব দেশগুলোর একদিন পর ঈদ পালিত হয়।
সেহেতু আগামী ২৯ শে মে বাংলাদেশে ঈদুল আযহা অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে সেটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে চাঁদ দেখার উপর।
আরও পড়ুনঃ
কোরবানির নাম দেওয়ার নিয়ম FAQS
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) শুধু মাত্র বিসমিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবর বলে পশু কুরবানি করতেন। তবে কে কুরবানি করছেন তা কুরবানির আগে উল্লেখ করা যেতে পারে।
আগামী জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে আরব দেশ গুলো চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ঈদ পালন করবে। তাই এর পরবর্তী দিন অর্থাৎ ১১ জিলহজ্জ বাংলাদেশে ঈদ পালিত হতে পারে। ইংরেজি মাসের হিসেবে আগামী ২৯ তারিখ কুরবানির ঈদ।
মূলত আমাদের রাসুল (সা.) আদর্শ অনুসারে কুরবানির পশুর গোশত ৩ ভাগে ভাগ করা উত্তম।
কোরবানির নাম দেওয়ার নিয়ম নিয়ে শেষ কথা
আমরা আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের সাথে কোরবানির নাম দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সকল তথ্যগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
এছাড়াও আমরা আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে কোরবানির ঈদ ২০২৩ কবে পালিত হবে এবং এর পাশাপাশি কোরবানির ঈদ সম্পর্কিত আরো গুরুত্বপূর্ণ সকল তথ্যগুলো তুলে ধরেছি।
আশা করছি আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট আপনাদের ভালো লাগবে এবং আপনারা আজকের এই পোস্ট থেকে জেনে গিয়েছেন কোরবানির নাম দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
আপনাদের যদি আজকের এই পোস্ট সম্পর্কে কোন প্রশ্ন কিংবা অন্যান্য মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।
আমরা অবশ্যই খুব দ্রুত আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর প্রদান করার চেষ্টা করব। আজকের এই পোস্ট শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।
এ ধরনের আরো গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে সব সময় আমাদের ওয়েবসাইটের সঙ্গেই থাকুন।